বকেয়া পরিশোধসহ সকল শ্রমিকদের ঈদ বোনাস প্রদানের দাবিতে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সমাবেশ অনুষ্ঠিত
ঈদুল আযহা উপলক্ষে মাসিক মজুরির সমপরিমান উৎসব বোনাস প্রদান এবং বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধের আহবান জানিয়ে দেশব্যাপী শ্রমিক সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। এছাড়াও সমাবেশে জাতীয় ন্যূনতম মূল মজুরি ৩০ হাজার টাকা ঘোষণা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি রোধ ও সর্বস্তরে স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুর দাবি জানানো হয়েছে । অদ্য (৩১ মে) বিকাল ৫ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান। সভাবেশে বক্তব্য রাখেন ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের যুগ্ম-সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোঃ শাহ আলম ভূইয়া, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোশিয়েশনের যুগ্ম-সম্পাদক আবু সাইদ, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও নারায়নগঞ্জ আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আজিজুল হক প্রমূখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন সরকারের পক্ষ থেকে ২৮ মে এর মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, বোনাসসহ সকল পাওনা পরিশোধ করার সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ শ্রমিক তাদের বকেয়া মজুরি, মে মাসের বেতন এবং উৎসব বোনাস পায়নি। শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে মজুরি-বোনাসের দাবিতে রাজপথে নামলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদের উপর চড়াও হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি-মুদ্রাস্ফীতি, কৃষিউপকরণের মূল্য বৃদ্ধি, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধি, ঔষুধপত্রসহ চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, বই-খাতা-কাগজসহ শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি, শিক্ষা শেষে চাকুরির অনিশ্চয়তা ইত্যাদির প্রভাবে শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনগণের জীবন-জীবিকা ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতর হলে চলার কারণে শুধু শ্রমিকরা নয় প্রতিদিনই নানা শ্রেণি পেশার মানুষ জীবন ও জীবিকার সংকটে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রমিক আন্দোলন দমনে শিল্প পুলিশের তৎপরতা, অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিলের খড়গ ঝুলিয়ে রাখার পাশাপাশি অন্তবর্তী সরকার সরকারি কর্মচারী (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ জারী করে ৮ দিনের নোটিশে যে কোন সরকারি কর্মচারীকে অগণতান্ত্রিকভাবে ইচ্ছামত চাকুরিচ্যূত করার আইন করা হয়েছে। দেশের শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণ আজ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছেন। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্দ্ধগতির পর শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়নি। শুধু তাই নয় মাসের পর মাস কাজ করেও গার্মেন্টস শ্রমিক, চা-বাগানের শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকরা মজুরি ও বোনাস পাচ্ছেনা। গত ঈদুল ফিতরে আগে থেকে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলন করলেও অদ্যাবধি শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। দেশের শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবী জনগণের এই কঠিন সময়ে ’গুদের উপর বিষ ফোঁড়া’র মতো বাংলাদেশকে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মায়ানমারে ‘মানবিক করিডোর’ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নয়া-উপনিবেশিক ও আধাসামন্তবাদী বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থলসংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গপোসাগরীয় দেশ হওয়ায় এদেশকে নিয়ে ভূরাজনৈতিক ও রণনীতিগত সামগ্রিক গুরুত্ব হিসেবে সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে বিবেচিত হচ্ছে। তারই প্রেক্ষাপটে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের সাথে প্রতিপক্ষ সাম্রাজ্যবাদী চীন-রাশিয়ার প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েই চলেছে। কারণ উভয়েরই জন্যে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মালাক্কা প্রণালীকে কেন্দ্র করে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের উপর নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্ব বাণিজ্য ও বিশ্ব আধিপত্যের জন্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে মিয়ানমারকে চীনা প্রভাব মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার বার্মা অ্যাক্ট চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ধারাবাহিক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এই তৎপরতার সাথে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম ও ষড়যন্ত্রের অংশ হচ্ছে তথাকথিত মানবিক করিডোর বা ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণের চ্যানেল করার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, মানবিক করিডোর প্রদান, চট্টগ্রামের সমুদ্র বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার যে তৎপরতা তা হচ্ছে ডঃ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন সরকারের জাতীয় ও জনস্বার্থবিরোধী নগ্ন ভূমিকা। মানবিক করিডোরের প্রশ্নসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক সাংস্কৃতিক যে সংকট চলছে তা বিচ্ছিন্ন কোন বিষয় নয়। এটা হচ্ছে বিশ্ব বাজার-প্রভাব বলয় পুনর্বণ্টন নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে তার সাথে সম্পর্কিত। চলমান বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষিতে বাণিজ্যযুদ্ধ, মুদ্রাযুদ্ধ, প্রযুক্তিযুদ্ধ, স্থানিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিপদ মূর্ত হয়ে সামনে আসছে। এর ফলে দেশের শ্রমিক ও শ্রমজীবি মানুষের জীবন আরো কঠিন পরিস্থিতিতে পতিত হওয়ার শংকা তৈরি হয়েছে। এমনাবস্থায় ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ দেশের শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রেক্ষিতে ১০ দফা দাবিনামা সামনে এনেছে। শ্রমিক শ্রেণির এই জীবিকার সংগ্রামের সাথে সাম্রাজ্যবাদীদের চাপিয়ে দেয়া অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে ন্যায়যুদ্ধের সংগ্রামকে অগ্রসর করতে হবে বলে নেতৃবৃন্দ সমাবেশে দেশের শ্রমিক শ্রেণির প্রতি আহবান জানান।